শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

‘শিবির ট্যাগ দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেবো নির্বাচনের আগে বের হতে পারবি না’

‘শিবির ট্যাগ দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেবো নির্বাচনের আগে বের হতে পারবি না’

স্বদেশ ডেস্ক:

‘তুই যদি এখন টাকা না দেছ, তবে আকতার (জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইরে দিয়ে তোরে একেবারে জেলে ঢুকায় দিব। আর এখন শিবির ট্যাগ নিয়ে একবার জেলে ঢুকলে নির্বাচনের আগে আর বের হতে পারবি না, সেটা তুই ভালো করেই জানোস। আমাদের ছাত্রত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সাত দিনের বেশি বহিষ্কার করে রাখতে পারবে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর শেষে এভাবেই হুমকি দিয়ে প্রায় ১৩ হাজার টাকা ছিনতাই করার অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা হলেন দর্শন বিভাগের (২০১৬-২০১৭) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও অর্থনীতি বিভাগের (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের ইকবাল মাহমুদ রানা। রানা অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তারা দু’জনই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের অনুসারী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর ও ছিনতাই শেষে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই যদি এই বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করছ তাহলে তোরে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ক্যাম্পাসের মেইন গেটে ঝুঁলিয়ে রাখবো।’

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম জনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ১৮তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে রসায়ন বিভাগের সাজসজ্জার কাজ শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের ইকবাল মাহমুদ রানা এবং দর্শন বিভাগের ১২তম আবর্তনের মোহাম্মদ মেহেদি ইব্রাহিমের পথ রোধ করে এবং এবং বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নানা ধরনের প্রশ্নের পর তারা মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে চেক করে। মোবাইলফোনে কিছু না পেয়ে আমাকে বার বার মেরে ফেলার ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়। পরে তারা ক্যাম্পাস থেকে বের করে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধর করে এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এরপর বাবা-মা ও টিউশন করা অভিভাবকদের বাসায় ফোন দিয়ে ১৩ হাজার টাকা নেন বিকাশে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইব্রাহিম বলেন, আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে চড়-থাপ্পর দিয়ে জোরপূর্বক আমার বিকাশ এবং নগদের পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এরপর মেহেদি আমাকে ইকবাল মাহমুদ রানার সাথে বসিয়ে রেখে আমার মোবাইল নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে নেয় এবং বিভিন্ন নাম্বারে রিচার্জ করে। আমাকে মেরে শিবির ট্যাগ দিয়ে দিবে। এমননি আমি যেন মুখ না খুলি এই ভয় দেখিয়ে ‘শিবির করি’ এই মর্মে জোর পূর্বক ভিডিও করে। তারা বলে আমি কোনো বিচার পাবো না, প্রক্টরও নাকি বিচার করবে না। আরো অনেক হুমকি দিয়েছে। আমি নিরাপত্তা চাই।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হলে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দেবেন। কোনো অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।

রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো: লুৎফর রহমান বলেন, এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিসে আসুক। দোষীরা যেকোনো দলেরই হোক, তারা পার পেতে পারে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন। আমরাও সেটাই করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে। দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না।

অভিযুক্ত ইকবাল মাহমুদ রানা বলেন, মিথির বিষয়ে পোস্ট কেন শেয়ার দিয়েছিল, তা জানতে চেয়েছিলাম। সে ভুল স্বীকার করে পোস্ট মুছে দিয়েছে। তাকে মারধর ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মেহেদী বলেন, ওই ছেলেটা নিজে স্বীকার করেছে, সে শিবির করে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। তাকে মারধর ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছিল এজন্য ফোনে ফ্লেক্সিলোড দিয়েছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877